বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন

কিয়েভ অস্ত্র ছাড়লে যুদ্ধ বন্ধ

কিয়েভ অস্ত্র ছাড়লে যুদ্ধ বন্ধ

স্বদেশ ডেস্ক:

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, রুশ অভিযান তখনই বন্ধ হবে, যখন কিয়েভ অস্ত্র ছাড়বে এবং মস্কোর দাবি পুরোপুরি মেনে নেবে। এ ছাড়া রাশিয়ার অভিযান পরিকল্পনামাফিক চলছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

গতকাল রবিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন এ অবস্থান তুলে ধরেন। গতকাল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সঙ্গেও কথা হয় পুতিনের। তবে ৪৫ মিনিটের ফোনালাপে তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো পক্ষই জানায়নি।এদিকে রুশ বাহিনীর একের পর এক গোলাবর্ষণে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মরিপোলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দুই লাখ মানুষের এই শহরটিতে গত ৫ দিন থেকে কোনো পানি নেই, নেই বিদ্যুৎ, নেই খাবার… নেই কোনো পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা। পথে পথে দেখা গেছে মানুষের মরদেহ। এর মধ্যে গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো অস্ত্রবিরতি ঘোষণা দিয়েও তা ভঙ্গ হয়েছে। অর্থাৎ গতকালও সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য মস্কো ও কিয়েভ একে অপরকে দোষারোপ করছে। খবর বিবিসি।

সব নীতিনৈতিকতা, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান লঙ্ঘন করে স্বাধীন-সার্বভৌম ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সেই আগ্রাসনের গতকাল ১১তম দিন অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের গোলায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মরিপোলের রাস্তায় রাস্তায় মরদেহ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। এমনকি হামলা থেকে রক্ষা পায়নি হাসপাতাল ও শিশুদের স্কুলও। রাজধানী কিয়েভের বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। তবে বন্দরনগরী মরিপোলের অবস্থা শোচনীয়।

মরিপোলের সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এ অনুযায়ী স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে নির্ধারিত পথে মরিপোল থেকে বেসামরিক নাগরিকরা শহর ছাড়তে পারবেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতি শুরুর পর পরই রুশ বাহিনী একের পর এক হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে কিয়েভ।

পরে মরিপোল সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী আজ সকালে (রবিবার) বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ শুরু হয়েছিল, কিন্তু রাশিয়ার গোলার কারণে এ কার্যক্রম অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লবিব থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জোয়েল গুন্টার জানিয়েছেন, দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জরুরি কাজটি ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য মস্কো-কিয়েভ একে অপরকে দোষারোপ করছে।

২৭ বছর বয়সী একজন আইটি ডেভেলপার বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত শনিবার শহরটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তা ব্যর্থ হয়েছে। এর পর দ্বিতীয়বার (রবিবার) আমার দাদাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার পর পরই বিস্ফোরণ শুরু হয়ে যায়। আবার বাসায় ফিরে আসি… দেখি শহরের চারপাশে ধোঁয়া উড়ছে। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির কথা শুনে অনেকেই এই শহরে এসেছিলেন যে এখান থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়া যাবে। এখন তারাও ফিরে যেতে পারছে না। ওই বাসিন্দা আরও জানিয়েছেন, পুলিশ এসে দোকান খোলার নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন। আমাদের প্রতিবেশীরা কিছু কেন্ডি, কিছু মাছ কিনে এনেছে।

এদিকে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন আবারও ফোনে আলোচনা করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে বলা হয়, তারা ৪৫ মিনিট আলোচনা করেছেন। তবে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা খবরে বলা হয়নি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুই নেতা আলোচনা করেছিলেন। সেই সময় ম্যাক্রন ইউক্রেনে অভিযান বন্ধে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে গতকাল সকালে পুতিন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরদোগান জরুরি অস্ত্রবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানান।

এদিকে ক্রেমলিন জানিয়েছে, সামরিক অভিযান তখনই বন্ধ হবে যখন কিয়েভ তার সামরিক কর্মকা- বন্ধ করে রাশিয়ার চাওয়া পরিপূর্ণ করবে। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রায় আধাঘণ্টা ফোনে কথা বলেন। সেই সময় তিনি বাইডেন প্রশাসনকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছিলেন কিন্তু ওয়াশিংটন তা প্রত্যাখ্যান করে।

এদিকে মালদোভা সরকার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে যে, এর পর ক্রেমলিনের টার্গেট কি তারা? মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিংকেন মালদোভার প্রধানমন্ত্রী নাটালিয়া গ্যাব্রিলিতা ও প্রেসিডেন্ট মায়া সান্দুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ব্লিংকেন হলেন তৃতীয় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি সাবেক সোভিয়েত আমলের এই দেশটি সফর করলেন। যদিও মালদোভা আক্রমণের তেমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। তার পরও মস্কো যদি যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চায়, তা হলে সোভিয়েত আমলের দেশগুলো সর্বপ্রথম আক্রান্ত হতে পারে।

এদিকে রুশ আক্রমণের মুখে গতকালও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশবাসীকে শত্রু মোকাবিলায় আহ্বান জানিয়েছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার ইউক্রেনীয় যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন শহরে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ শরণার্থী জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে দেশে দেশে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হাজার হাজার মানুষ রুশবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ ছাড়া খোদ রাশিয়াতেও পুতিনবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার বিক্ষোভকারীকে আটকও করেছে পুতিন প্রশাসন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877